Support: +880 1813-945480 (9AM to 10PM)

তৃষ্ণা (হার্ডকভার)

By: সেলিনা হোসেন
Category: গল্প

৳ 80 ৳ 100

“তৃষ্ণা”বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ একটি সুন্দর সকাল। বুড়াে রাত বিদায় নেবার আগে বৃষ্টি থেমে গেছে। তবু তার শেষ চিহ্নটুকু এখানে-সেখানে ছড়ানাে। চিকন ঘাসের ডগায় দু-একটি পানির ফোঁটা সূর্যের সােনালি আভায় চিকচিক করছে। চারপাশে রবিশস্যের ক্ষেত। হলদে ফুলে ভরা। তারপর এক পূর্ণ-যৌবনা নদী। ওপারে তার কাশবন। এপারে অসংখ্য খড়ের গাদা। ছেলেটির বুকে মুখ রেখে খড়ের কোলে দেহটা এলিয়ে দিয়ে ; মেয়েটি ঘুমােচ্ছে। ওর মুখে কোনাে অভিব্যক্তি নেই। ঠোটের শেষ সীমানায় শুধু একটুখানি হাসি চিবুকের কাছে এসে হারিয়ে গেছে। ওর হাত ছেলেটির হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখা। দুজনে ঘুমােচ্ছে ওরা। ছেলেটিও ঘুমিয়ে । তার মুখে দীর্ঘপথ চলার ক্লান্তি। মনে হয় অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছিলাে ওরা। চুলের প্রান্তে এখনাে তার কিছু রেশ জড়ানাে রয়েছে। সহসা গাছের ডালে বুননাপাখির পাখা ঝাপটানাের শব্দ শােনা গেলাে। মটরশুটির ক্ষেত থেকে একটা সাদা ধবধবে খরগােশের বাচ্চা ছুটে পালিয়ে গেলাে কাছের অরণ্যের দিকে। খড়ের কোলে জেগে উঠলাে অনেকগুলাে পায়ের ঐকতান। সমতালে এগিয়ে এলাে ওরা। যেখানে, ছেলেটি আর মেয়েটি এই পৃথিবীর অনেক চড়াই-উত্রাই আর অসংখ্য পথ মাড়িয়ে এসে অবশেষে এই স্নিগ্ধ সকালের সােনা-রােদে পরস্পরের কাছে অঙ্গীকার করেছিলাে। ভালােবাসি। বলেছিলাে। এই রাত যদি চিরকালের মতাে এমনি থাকে, এই রাত যদি আর কোনােদিন ভাের না হয় আমি খুশি হবাে। বলেছিলাে। ওই-যে দূরের তারাগুলাে, যারা মিটিমিটি জ্বলছে তারা যদি হঠাৎ ভুল করে নিভে যেতাে, তাহলে খুব ভালাে হতাে। আমরা অন্ধকারে দুজনে দুজনকে দেখতাম।বলেছিলাে। হয়তাে কিছুই বলেনি ওরা। শুধু শুয়েছিলাে। আঠারাে-জোড়া আইনের পা ধীরেধীরে চারপাশ থেকে এসে বৃত্তাকারে ঘিরে দাঁড়ালাে ওদের। ওরা তখনাে ঘুমুচ্ছে। তারপর। আমার কোনাে জাত নেই। মাংসল হাতজোড়া ভেজা টেবিলের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে বুড়াে আহমদ হােসেন বললাে, আমার কোনাে জাত নেই। আমি না-হিন্দু, না-মুসলমান, না-ইহুদি, না-খৃষ্টান। আমায় জাত তুলে কেউ ডেকেছাে কি এক ঘুষিতে নাক ভেঙে দেবাে বলে দিলাম।

Title তৃষ্ণা (হার্ডকভার)
Author সেলিনা হোসেন
Publisher কথাপ্রকাশ
ISBN 9789844042728
Edition 5th Print, 2016
Number of Pages
Country
Language
সেলিনা হোসেন

২১টি উপন্যাস, ৭টি গল্পগ্রন্থ ও ৪টি প্রবন্ধগ্রন্থের রচয়িতা সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। সমকালীন রাজনৈতিক সংকট ও দ্বন্দ্বের উৎস ও প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে সেলিনা হোসেন এর বই সমূহ-তে। সেলিনা হোসেন এর বই সমগ্র অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, রুশসহ একাধিক ভাষায়। প্রবীণ এ লেখিকা ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ই জুন রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। আদি পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীতে হলেও সেখানে বেশি দিন থাকা হয়নি তার। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাজশাহী চলে এলে সেটিই হয়ে ওঠে সেলিনার শহর। স্থানীয় এক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য পড়তে ভালোবাসতেন তিনি। আর ভালোবাসার টানে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সেলিনা হোসেন। এরপর সরকারি কলেজে শিক্ষকতা এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনেও কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি পত্রপত্রিকার জন্য চালিয়ে গেছেন তার কলম। টানা ২০ বছর তিনি ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেলিনা হোসেন মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস রচনা করে পাঠকমনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তার রচিত মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক কালজয়ী উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্রও। ‘যাপিত জীবন’, ‘ক্ষরণ’, ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’, ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’, ‘যুদ্ধ’, ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ (তিন খণ্ড) ইত্যাদি তার জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘স্বদেশে পরবাসী’, ‘একাত্তরের ঢাকা’, ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন’ ইত্যাদি তার জনপ্রিয় প্রবন্ধ। কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘কাকতাড়ুয়া’, ‘চাঁদের বুড়ি পান্তা ইলিশ’, ‘আকাশ পরী’, ‘এক রূপোলি নদী’ সহ বেশ কিছু সুপাঠ্য গ্রন্থ। সাহিত্যাঙ্গনে এই অনবদ্য অবদানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়াও তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার’, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ সহ অসংখ্য পদক পুরস্কার পেয়েছেন।